ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫ , ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ

​যশোরে তিন মাসে ১৮ খুন

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৭-০৭-২০২৫ ১২:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৭-০৭-২০২৫ ১২:৫৫:৩৪ অপরাহ্ন
​যশোরে তিন মাসে ১৮ খুন ফাইল ছবি
যশোরে গত তিন মাসে ১৮টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। জমিজমা, রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিরোধের জেরে সংগঠিত এসব হত্যাকাণ্ডের করণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব অবহেলা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সর্বোপরি পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে দুষছেন সচেতন নাগরিক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের সকল ইউনিট কাজ করছে। অপরাধীদের আটকের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছে তারা।

জানা যায়, গত ১২ মে যশোর শহরের ষষ্টিতলায় সন্ধ্যায় বিপুল নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তার পরিবারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চেয়েও তারা কোনো সাহায্য পাননি। এরপর কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় বিপুলকে। কেবল বিপুল নন গত ২২ মে ঘের ইজারা দেয়ার নামে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলামকে। এভাবে গত তিন মাসে যশোরে জমিজমা, রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিরোধের জেরে ১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের কুপিয়ে, গুলি করে, ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ অবস্থা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব অবহেলা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সর্বোপরি পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এর জন্য দায়ী।

বিপুলের বাবা আখতার আলী ও স্ত্রী সুমাইয়া জানান, ঘাতক বাপ্পী দীর্ঘদিন ধরে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো। তারা প্রাণে বাঁচতে দেবে না বলছিল। আমরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর কাছে গিয়েছি। কোনো প্রতিকার পাইনি। কৌশলে ফোন করে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি তাদের অভিযোগ গুরুত্ব দিতো তাহলে হয়ত এ হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত।একের পর এক হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু।তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। সাধারণ মানুষ মনে করেছিলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইয়ের মত অপরাধ বেড়েছে। এতে করে আমরা অনেক শঙ্কার মধ্যে জীবনযাপন করছি।’শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু আরও বলেন, ‘পুলিশ একটি অকার্যকর বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ঘটনা ঘটার পর তারা রুটিন ওয়ার্ক করছে। কিন্তু অপরাধের লাগাম টানতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ, চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার ও এলাকা ভিত্তিক নিয়মিত অভিযান তার কিছুই করছে না। এতে করে আমরা শঙ্কায় আছি আগামী দিনগুলোতে এ ভয়াবহতা আরও বাড়বে কীনা। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করে আইনের শাসন নিশ্চিত করুক।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে। দ্রুততম সময়ে ঘটনার কারণে উদঘাটন, অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। হয়তো একটি ঘটনায় জড়িত সব অপরাধীকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারিনি; কিন্তু আমাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।’তিনি আরও বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধ নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলো প্রতিরোধে আমরা থানা, ক্যাম্প, ফাঁড়ির মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজও করছি। যাতে কেউ অপরাধ কাণ্ডে না জড়িয়ে প্রতিকারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সরব রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দিন ও রাতে টহল চলে। সিনিয়র অফিসারদের দিয়ে যা তদারকি করা হয়। যশোর পুলিশের প্রতিটি সদস্য যে যার জায়গা থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য সর্বদা সজাগ আছে।’প্রসঙ্গত, যশোর জেলা পুলিশ গত তিন মাসে দুই হাজার ৯২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে নিয়মিত মামলার আসামি ৮৭৪ জন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এক হাজার ১৯২ জন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্যান্য আইনে ২৮ জন।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ